ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় সাইনবোর্ড দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার জায়গা দখলে নিল ইউপির চেয়ারম্যান

পেকুয়া প্রতিনিধি ::  কক্সবাজারের পেকুয়ায় সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা আ’লীগের প্রয়াত সভাপতি আ,ক,ম সাহাব উদ্দিন ফরায়েজীর দোকানসহ জায়গা দখলে নিল টইটং ইউপির চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী।

উপজেলার টইটং ইউনিয়নের পূর্ব টইটং বনকানন বাজারে ১ টি দোকান ঘরের আধিপত্য নিতে স্থানীয় ইউপির চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী ও উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতি উপজেলা আ’লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত আকম সাহাব উদ্দিন ফরায়েজীর পুত্র মেহেদী হাসান ফরায়েজীর মধ্যে দ্বন্দের প্রকট আকার ধারণ করেছে। ওয়ার্ড আ’লীগের দলীয় কার্যালয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে সেখানে ১টি সাইনবোর্ড টাঙ্গানো হয়।

এর ধারাবাহিকতায় টইটং ইউপির চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী দোকান ঘরটির দখল তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছেন। বনকানন বাজারে ওই দোকান ঘরটির জবর দখল ঠেকাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরায়েজীর পুত্র মেহেদী হাসান ফরায়েজী রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ পাওয়ার জন্য পেকুয়া উপজেলা আ’লীগের নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেন। ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতৃবৃন্দরা ওই জায়গাটিতে জবর দখল না করতে চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে বারণ করছিলেন।

কিন্তু কিছুতেই জবর দখল ঠেকানো যাচ্ছিল না। এরপর আইনগত প্রতিকার ও প্রশাসনিক সহযোগিতার জন্য মেহেদী হাসান ফরায়েজী বাদী হয়ে পেকুয়ার ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। পেকুয়া থানা পুলিশ দু’দফা বিরোধীয় স্থান পরিদর্শন করেছেন। এ সময় বনকানন বাজারে আ,ক,ম সাহাব উদ্দিন ফরায়েজীর দোকান ঘরটির দখল ঠেকাতে তৎপর ছিলেন পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ ওই স্থান ত্যাগ করার পর ফের দখল তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী স্থানীয় ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের ইউনিয়ন কমিটির সাধারন সম্পাদক। গত ইউপি নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অপরদিকে আকম সাহাব উদ্দিন ফরায়েজী ছিলেন আ’লীগের প্রয়াত সভাপতি। ২০১৩ সালে আকম সাহাব উদ্দিন ফরায়েজী পেকুয়া উপজেলা আ’লীগের সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের দিকে ফরায়েজী নিহত হন। চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম ও আকম সাহাব উদ্দিন ফরায়েজী সম্পর্কে আপন মামা-ভাগিনা।

তবে স্থানীয় সুত্র জানায়, গত ইউপি নির্বাচন থেকে দুই পরিবারের মধ্যে স্নায়ুদ্বন্ধসহ তৈরী হয়েছে মতবিরোধ। ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক পেতে জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীসহ টইটং থেকে ৩ জন প্রার্থী ঢাকায় লবিং করেন। এদের ১ জন ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরায়েজীর পুত্র ছাত্রলীগ উপজেলার সিনিয়র নেতা মেহেদী হাসান ফরায়েজী।

এ ব্যাপারে মেহেদী হাসান ফরায়েজী বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছি আমরা। আমার পিতার রক্ত রঞ্জিত হয়েছে এ মাটিতে। রক্তের উপর দিয়ে জাহেদুল ইসলাম চেয়ারম্যান হয়েছেন। ১৯৯০ সালের দিকে বনকানন বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই সময় থেকে বাজারে একটি দোকান আমার পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আকম সাহাব উদ্দিন ফরায়েজীর নামে বরাদ্ধ ছিল। দলীয় কার্যালয়ের নাম ব্যবহার করে জাহেদ চেয়ারম্যান সেখানে রাতারাতি সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিয়ে দোকানটি জবর দখল করেছে। তার মা আমার আপন ফুফী। বিষয়টি তাকে জানিয়েছি। তিনি বলেছেন, চেয়ারম্যান মায়ের কথাও নাকি শুনছেননা।

এ ব্যাপারে টইটং ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ছরওয়ার কামাল চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, কয়েক বছর ধরে সেটি দলীয় অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। ফরায়েজীর পুত্র মেহেদী হাসান ফরায়েজী বিষয়টি আমাকেও অবহিত করেছেন।

এ ব্যাপারে টইটং ইউপির চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এটি আকম সাহাব উদ্দিন ফরায়েজীর জায়গা নয়। জায়গাটি বনকানন মাদ্রাসার। ফরায়েজী জীবিত থাকতে দলীয় কার্যালয়ের জন্য মাদ্রাসা থেকে জায়গাটি অস্থায়ীভাবে নিয়েছিলেন। এটি সংষ্কার করে ৪ নং ওয়ার্ড আ’লীগের অফিস হিসেবে থাকবে।

পাঠকের মতামত: